এবার বেলজিয়ামের স্কুলে মহানবী (সা:)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন

এবার বেলজিয়ামের স্কুলে – এবার বেলজিয়ামের একটি স্কুলে হযরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন করেছেন শিক্ষক। এ ঘটনার পরপরই স্কুল শিক্ষককে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ব্রাসেলসের মোলেনবিক সেন্ট-জিন এলাকার একটি স্কুলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র।
বিতর্কিত ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদো সম্প্রতি মহানবীকে যেসব ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে ওই শিক্ষক তার একটি কার্টুন পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেখান। একই কাজ করে কীভাবে একজন ফরাসি স্কুলশিক্ষক নিহত হন তারও বর্ণনা দেন ওই শিক্ষক।
ওই শিক্ষক ক্লাসে মহানবীর অবমাননাকর কার্টুন প্রদর্শন করার পর দুই থেকে তিনজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানান। এরপরই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
মোলেনবিকসের মেয়রের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘একটি বিতর্কিত ছবির কারণেই আমারা তার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে নবীর কোন ছবি না হয়ে অন্য কোন বিতর্কিত ছবি থাকলেও এক ব্যবস্থা নিতাম।’
সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সামনে মহানবীর ব্যঙ্গাত্মক কাটুন প্রদর্শন করেন স্যামুয়েল প্যাটি নামে এক শিক্ষক। এর জেরে হামলায় তিনি নিহত। পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তার দেশের ‘উগ্র’ মুসলমানদের দায়ী করেন।
কার্টুন এবং ইসলাম নিয়ে কুটূক্তির জেরে বিশ্ব জুড়ে ম্যাক্রাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বয়কট করা হচ্ছে ফরাসি পণ্য। তবে শনিবার (৩১ অক্টোবর) নিজের ভোল পাল্টে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের কারণে মুসলিমদের ব্যথিত হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করেছেন বলে জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
যদিও ধর্ম নিয়ে দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা কোনভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে তিনি।
মুসলমানদের অনুভূতি বুঝতে পেরেছি: ম্যাক্রোঁ
নিজের ভোল পাল্টে অবশেষে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের কারণে মুসলিমদের ব্যথিত হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করেছেন বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
যদিও ধর্ম নিয়ে দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা কোনভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে তিনি। মুসলামানদের ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত হানার পর ছুরি হামলাসহ ফ্রান্সজুড়ে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরই তিনি এমন মন্তব্য করেন।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশহারাকে ম্যাক্রোঁ আরো জানান, ‘ধর্ম নিয়ে তার মন্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে মুসলিম দেশগুলো থেকে কঠিন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আমি মুসলমানদের অনুভূতির জায়গা বুঝতে পারছি। আমি তাদের সম্মান করি। তবে সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে, শান্তি প্রচার এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করাও উচিত’।
ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আজ বিশ্বে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা ইসলামকে বিকৃত করে এবং এই ধর্মের নামে নিজেদের রক্ষা করার দাবি করছে তারা। কিন্তু ইসলামের নামে চরমপন্থী আন্দোলন এবং ব্যক্তি সহিংসতা চালিয়ে আসছে। কার্টুন প্রকাশের জেরে বিশ্বের অনেক দেশ ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে, যা দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত।’
‘ইসলাম ধর্ম সঙ্কটে’ রয়েছে সম্প্রতি ম্যাক্রোঁ এমন মন্তব্যে পাশ কাটিয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমার কথাগুলো নিয়ে মিথ্যাচার করেছে এবং ভুলভাবে ছড়ানো হয়েছে। আশা করি সাধারণ মানুষ ঠিকই আমার কথাগুলি বুঝতে পেরেছে’।
বিতর্কিত শার্লি এবদো ম্যাগাজিনের প্রসঙ্গে বলেন, ‘এগুলো কোন সরকারি প্রকল্প নয়, বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়। ফ্রান্সের মুক্ত এবং স্বতন্ত্র সংবাদপত্রগুলি থেকেই প্রকাশিত হয়েছে’।
২০১৫ সালে যখন বিতর্কিত ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপার কারণে হামলার শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি, তখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যগাজিনটিকে পুনরায় কার্টুন প্রকাশের জন্য অনেক উস্কানি দেন।
তিনি আরো যোগ করেন, ‘উগ্র মুসলিমদের কারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ মুসলমানরা। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের শিকার ৮০ ভাগেরও বেশি মুসলমান এবং যা আমাদের সবার জন্যই সমস্যা।’
সম্প্রতি ফরাসি বিতর্কি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন শার্লি এবদো হযরত মুহাম্মদ (সা:)কে নিয়ে ব্যঙ্গত্মাক কার্টুন ছাপায়। এর জেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিবাদ জানায়। যদিও ‘ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদ’ কঠোর হস্তে দমনেরও ঘোষণা দেন তিনি। কার্টুন প্রকাশে বন্ধের আহ্বানের বিষয়ে তিনি বলেন, কার্টুন প্রকাশনা তিনি বন্ধ করতে পারবেন না। কার্টুন প্রকাশ বন্ধ করাকে স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর আঘাত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফরাসি জাতি নিজেদের মূল্যবোধ বিসর্জন দেবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিবাদে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফরাসি পণ্য বয়কট অব্যাহত রাখে। ইসলাম ধর্ম নিয়ে ম্যাক্রোঁ’র এমন কাণ্ডে কঠোর প্রতিবাদ জানায় জাতিসংঘও।