আরাভ খানের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন তারই স্ত্রী কেয়া

সাম্প্রতিক সময়ে আরাভ খান নামক এক যুবক সংবাদ মাধ্যম গুলোতে শিরোনাম হয়েছেন এবং সেই সাথে তার বিভিন্ন কর্মকান্ড আলোচনায় উঠে আসছে। তার আমন্ত্রনে সম্প্রতি দুবাইয়ে নিজস্ব মালিকানাধীন একটি জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যান বাংলাদেশের একজন ক্রিকেট তারকা এবং বিনোদন জগতের লকয়েকজন তারকা। এরপর আরাভ খানের বিষয়ে নড়েচড়ে বসে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর আরাভ খানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে। এদিকে আরাভ খানের বিষয়ে তার স্ত্রী জবানবন্দি দিয়েছেন যেখানে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হ”/ত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান নারীদের দিয়ে খারাপ কাজের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তাকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া। রাজধানীর বনানীতে যে ফ্ল্যাটে মামুনকে নিথর করা হয়, সেখানে রবিউল তার সহযোগীদের নিয়ে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা চালাতো।
মামুনের খুনের ঘটনার মামলায় ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া সাত আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য রয়েছে। এই সাত আসামির মধ্যে রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়াও রয়েছেন। রবিউল শুরু থেকে পলাতক। সম্প্রতি জামিনের পর পালিয়েছেন সুরাইয়া।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই মামুনকে খু”/ন করা হয়। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার অর্ধ-দগ্ধ নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হ”/ত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে রবিউল, সুরাইয়াসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ চার্জশিট জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত বিভাগ (ডিবি)।
অভিযুক্ত ১০ জনের মধ্যে ২ জন মেয়ে। তারা জামিনে আছেন। বাকি আটজনের মধ্যে ছয়জন এখন কারাগারে। তারা হলেন রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)।
মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মামুন হ”/ত্যার পর রবিউল ভারতে পা”লিয়ে যায়। সেখানেই বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে আরাভ খানের নাম ছিল। এই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় সোনা ব্যবসায়ী। তার মালিকানাধীন আরভ জুয়েলার্স গত সপ্তাহে দুবাইতে উদ্বোধন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় আসেন রবিউল।
রবিউলের নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা
স্বীকারোক্তিতে সুরাইয়া বলেন, প্রথমে ফে”সবুকের মাধ্যমে রবিউলের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে জানতে পারে রবিউল নারীদের দিয়ে খারাপ কাজ করানোর ব্যবসায় জড়িত। সে নারীদের সঙ্গে পুরুষদের আপ”ত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যা”কমেইল করত। একসময় তিনি (সুরাইয়া)ও এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
জবানবন্দিতে সুরাইয়া বলেন, বনানীর ফ্ল্যাটটি নারীদের দিয়ে ব্যবসার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। স্বপন, দিদার, আতিক, মিজান ও সারোয়ার ফ্ল্যাট পাহারা দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি (সুরাইয়া) প্রতি দুই দিন অন্তর ফ্ল্যাটে গিয়ে নারীদের দিয়ে খারাপ কাজের ব্যবসার টাকা সংগ্রহ করতেন। ৮ জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যার পর পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে জন্মদিনের পার্টিতে বনানীর ফ্ল্যাটে ডাকা হয়। পরে তাকে নিথর করা হয়।
রবিউল ইসলাম ওরফে আরভ ও আবু ইউসুফ ওরফে লিমন
মামুনকে নিথর কাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করা বাকি ছয় আসামিও রবিউল নারীদের দিয়ে খারাপ কাজের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানান।
বনানীর ফ্ল্যাটের দায়িত্বে ছিলেন দিদার। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ঘটনার দেড় বছর আগে রবিউলের সঙ্গে তার দেখা হয়। পরে দুজনের ঘনিষ্ঠতা হয়। নারীদের দিয়ে খারাপ কাজ করানোর ব্যবসার জন্য বনানীর ফ্ল্যাট ভাড়া নেন রবিউল। একসময় তিনিও জড়িয়ে পড়েন এই ব্যবসার সঙ্গে। তিনি ওই ফ্ল্যাটের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি, আতিক, স্বপন, মিজান ও সারো ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। রবিউলের নির্দেশে তারা ফ্ল্যাটে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষদের খারাপ কাজ করার সময়কার ছবি তুলে ব্ল্যা”কমেইল করত।
এরপর আরাভ খানের স্ত্রী সুরাইয়া এবং আরও ৬ জন আসা”মি আদালতে গিয়ে তারা যে জবানবন্দি দিয়েছিল সেটা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আবেদন করেন। তারা লিখিতভাবে আদালতের নিকট আবেদন করে জানিয়েছিলেন যে, তারা এই ধরনের জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের ভয়ে এবং একপ্রকার বাধ্য হয়ে এই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তারা এটাও দাবি করেছেন যে, মামুন নামের যে পুলিশ কর্মকর্তা খু”/ন হয়েছে, সেই ঘটনার সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না।