Miscellaneous News

ফেঁসে গেলেন আরাভ খান

পুলিশ খুনের মামলায় দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে নজরদারিতে রেখেছে দেশটির পুলিশ। সোমবার রাত থেকে দুবাইয়ের একটি ফ্ল্যাটে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির পরই দুবাই পুলিশের এনসিবি শাখা আরাভকে আটকের তৎপরতা শুরু করে। পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশের কেউ মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে আরাভের ভারতীয় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও আধার কার্ডসহ অন্যান্য বিষয়ে জানতে দেশটির কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান এবং বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়েই তিনি চলে যান দুবাইয়ে। সেখানে গত সপ্তাহে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা যোগ দিলে আরাভ আলোচনায় আসেন।

আরাভের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার ভারতকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মূলত, আরাভ কীভাবে ভারতের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করেছেন সেই বিষয়ে পুলিশ জানতে চেয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হননি। তবে তিনি পালিয়ে থাকতে পারবেন না’ বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি যৌথ দল দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সরকারি আদেশ জারি করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই তিন থেকে চারজনের একটি দল দুবাই যেতে পারে।

সূত্র জানায়, আরাভকে আটক রাখা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এর কারণ আরাভকে গ্রেপ্তার করার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা কী হবে, তাকে আদৌ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা দেশটির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়। কারণ সূত্রের তথ্য মতে, দুবাইয়ে যে কেউ যেকোনো পরিমাণ বিনিয়োগ করলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। সেই হিসাবে আরাভকে কোন ধরনের অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হবে তা নিয়ে দুবাই পুলিশের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারপোলের অনুরোধে আরাভকে প্রাথমিকভাবে পুলিশি নজরদারি ও হেফাজতের মধ্যে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কি না, পাঠালে কীভাবে সেটা করা হবে- এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর ব্যাপক আলোচনা আসে জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানকে নিয়ে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, খুনের মামলাসহ ১২ মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট নেয়ার বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ার পর তার পাসপোর্ট সাসপেন্ড করেছে। ফলে ভারতীয় পাসপোর্টের মাধ্যমে দুবাইতে তার স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও বাতিল হয়ে গেছে।

কূটনৈতিক একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আরাভ এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। যেহেতু তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি ইন্টারপোলে নথিভুক্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশ তাকে নিজেদের নাগরিক হিসেবে দাবি করেছে, সেহেতু সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ তাকে অন্য অবৈধ বসবাসকারীদের মতো বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। এ ক্ষেত্রে বন্দি বিনিময় চুক্তির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।’

এদিকে দুবাইয়ের স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনভর রবিউল ওরফে আরাভকে তার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়নি। এই প্রতিবেদক তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন— এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ওই খুনের ঘটনার পরে অন্য আসামিদের সঙ্গে আরাভকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে দুদিন রাখার পর তাকে পুলিশের এক পদস্থ কর্তার অনুরোধে ছেড়ে দেয়া হয়। চার দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যম এসব তথ্য প্রকাশ করছে। এর পরই পুলিশপ্রধান (আইজিপি) এ বিষয়ে মুখ খোলেন।

মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। সূত্র: দৈনিক বাংলা

পাঠকের মতামত:

Back to top button