Miscellaneous News

বছরে ৪ মাস লা’শ দাফন করা যায় নিজ গ্রামে, বাকী’ ৮ মাস…!

বছরের মাত্র ৩-৪ মাস স্বজনদের লা’শ দাফন করা যায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজে’লার সুলতানপুর গ্রামে। এরপর বাকী’ আট মাস চাইলেও স্বজনদের লা’শ দাফনের সুযোগ থাকে না গ্রামের কবরস্থানে। এ সময়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে অন্য উপজে’লায় গিয়ে সুলতানপুর গ্রামবাসীর লা’শ দাফন করতে হয়।

বর্ষা মৌসুমে কেউ মা’রা গেলে লা’শ দাফন করতে পারছে না সুনামগঞ্জের দুর্গম শাল্লা উপজে’লার সুলতানপুরবাসী। বর্ষাকালীন প্রায় আট মাস তাদের গোরস্তানটি পানিব’ন্দি থাকে। তাই এই সময়ে কেউ মা’রা গেলে তারা পার্শ্ববর্তী নেত্রকোণা জে’লায় খালিয়াজুড়ি উপজে’লা সংলগ্ন মামুদনগর গোরস্তানে চেয়েচিন্তে স্বজনদের দাফন করেন।

গ্রামের বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভা’রত-পা’কিস্তান যু’দ্ধের আগে পঞ্চাশের দশকে শাল্লার বিভিন্ন গ্রামে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মু’সলমান সম্প্রদায়ের লোকজন এসে পতিত জমিতে আবাসস্থল করেন। শাল্লা উপজে’লা সদরঘেষা সুলতানপুর নাম দিয়ে তারা সেখানে শত বছর ধরে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে এই গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামে ম’সজিদ, মাদরাসা ও প্রাথমিক স্কুলও রয়েছে। গ্রামের পূর্বে ছায়ার হাওরের মাউতি জলমহাল লাগোয়া একটি কবরস্থান রয়েছে। বছরের ৩-৪ মাস এই গোরস্তানে তারা কেউ মা’রা গেলে সমাধীস্থ করতে পারেন। তবে বর্ষাকালীন প্রায় ৮ মাস সেই সুযোগ থাকে না।

স্বাধীনতার পরে হাওরে মাটি ভরাট করে গোরস্তানটি তৈরি করেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু সমতল থেকে গোরস্তানটি উঁচু না করায় বর্ষায় হাওরের ঢেউয়ে কবরস্থানের মাটি আস্তে আস্তে সরে যায়। গত এক দশক আগে গ্রামের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন আবারো সেখানে সরকারি একটি প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ করেন। ওই মাটিও বর্ষায় হাওরের ঢেউয়ে সরে গেছে। প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় প্রতি বছরই কবরের মাটি দেবে যাচ্ছে।

গ্রামবাসী জানালেন, বর্ষায় তাদের কোনো স্বজন মা’রা গেলে তখন গোর দাফন করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন। বহুদূরের মামুদনগরের গোরস্তানে নিয়ে দাফন করতে হয় মৃ’তদেহ। গ্রামবাসী বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে আবেদন জানালেও কেউ কর্ণপাত করেননি।

সুলতানপুর গ্রামের ব্যবসায়ী হবিব মিয়া বলেন, শাল্লা সদরের বাসিন্দা হয়েও আম’রা উপেক্ষিত। আমাদের মৃ’তদের একমাত্র ঠিকানা হলো গোরস্থান। এই গোরস্তান বর্ষাকালীন প্রায় আট মাস পানিব’ন্দি থাকায় তখন লা’শ দাফনের সুযোগ থাকে না। খালিয়াজুড়ি উপজে’লার সীমান্ত সংলগ্ন মামুদনগরে গোরস্থানে তখন লা’শ দাফন করতে হয় আমাদের।

একই গ্রামের জুয়েল মিয়া বলেন, ১০ বছর আগে আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান সাব প্রথম মাটি ফেলে গোরস্থানটি সংস্কার করেছিলেন। গত কয়েক বছরের ব’ন্যায় মাটি সরে গেছে। এখন বর্ষার সময় লা’শ দাফনের জায়গা নেই আমাদের।

এলাকার সমাজসেবী প্রা’ণকৃষ্ণ সরকার বলেন, সুলতানপুর গ্রামের কোনো ব্যক্তি বর্ষাকালে মা’রা গেলে বিপাকে পড়েন। মানসিবকভাবে ম’র্মাহত স্বজনরা তখন লা’শ দাফন নিয়ে হিমশিম খান। কয়েক কিলো মিটার দূরে গিয়ে তাদেরকে ক’ষ্ট করে অন্য গ্রামে জায়গা চেয়ে লা’শ দাফন করতে হয়।

উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা আল মুক্তাদীর হোসেন বলেন, সুলতানপুর গ্রামবাসীর এই সমস্যা স’ম্পর্কে আম’রা অবগত নই। তবে গোরস্থান ভরাট বা সংস্কারে গ্রামবাসী আবেদন করলে আম’রা ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া ইস’লামিক ফাউন্ডেশনকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাবেন বলে জানান তিনি।

উপজে’লা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী বলেন, সুলতানপুর গ্রামবাসী বর্ষায় স্বজন মা’রা গেলে মামুদনগর গোরস্থানে নিয়ে দাফন করেন। তাদের গোরস্থানটি সংস্কারে আমা’র উদ্যোগ নেব।

পাঠকের মতামত:

Back to top button