Miscellaneous News

মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছেনা যে ৩ কারণে

সরকারের বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দিনদিন কমছেই। অর্থ বিভাগ বলেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে আগের মতো প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কারণ তিনটি। প্রথমত, সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ সীমা নামিয়ে আনা হয়েছে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে’। তৃতীয়ত, মুনাফার হারের কয়েকটি স্তর করা হয়েছে। এসব সংস্কার কার্যকর করায় সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ আগের তুলনায় কমেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ ২০২২ সালের জুলাই থেকেই সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কম হচ্ছে। ওই মাসে নিট বিক্রি হয়েছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্টে এ বিক্রি আরও কমে দাঁড়ায় আট কোটি টাকায়।

সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বলতে বোঝানো হয়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও ভাঙানোর মধ্যকার ব্যবধান। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে, ভাঙানো হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে নেতিবাচক। যদিও ব্যাংকে সঞ্চয়ের তুলনায় সরকারি সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

গত বছরের জুলাইয়ে পরের চার মাস ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়েছে এবং প্রতি মাসেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, যেমন সেপ্টেম্বরে ৭১ কোটি, অক্টোবরে ৯৬৩ কোটি, নভেম্বরে ৯৮৩ কোটি ও ডিসেম্বরে ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের মোট নতুন বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি টাকার। একই মাসে বিনিয়োগকারীরা ৭ হাজার ৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন। ভাঙানো থেকে মোট বিক্রি বাদ দেওয়ার পর নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে নেতিবাচক ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকায়।

সব মিলিয়ে অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়েছে ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। এই বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ১০ হাজার ২৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, যা ওই অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার কোটি টাকার ৩১ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পান। কিন্তু এই বিক্রি সরকারের জন্য ঋণ। জনগণের কাছ থেকে এ ঋণ নেওয়ার বিপরীতে সরকারকে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা থাকলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের ২৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নেওয়া যাবে বলে সরকারকে বলেছে। এ শর্ত এমনিতেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, সংকটে থাকা মানুষ সঞ্চয়পত্রে যতটা না নতুন বিনিয়োগ করছেন, ভাঙাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ব্যয় বাবদ ৪২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মুনাফা বাবদ বাজেট বরাদ্দের ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে। নিট বিক্রি না বাড়লেও আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে মুনাফা খাতে ব্যয় ঠিকই হচ্ছে।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আহমেদ জানান, সাধারণ মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিবেচিত হতো। এখন সরকার কর্তৃক সুদহার কমানোসহ নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ কমছে মানুষের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সুদহার কমানোসহ নানান কড়াকড়ির আরোপ করার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমেছে। বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই সরকারের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। সুদহার কমায় অবসরের অর্থ কিংবা পরিবারের বাড়তি টাকা থাকলেও সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে আসছেন না। এতে বিক্রি কমে যাচ্ছে। এসব কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বাড়ছে।

পাঠকের মতামত:

Back to top button