২ বাংলাদেশি মে’য়েকে প’তিতালয়ে বিক্রির কাহিনী

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অ’সংখ্য মে’য়ে ভারতসহ বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে পা’চার হয়ে যায়। এরপর তাদের বিক্রি করা হয় বিভিন্ন প’তিতালয়ে। বৃহস্পতিবার ( ১৫ অক্টোবর) ভারতের মহারাষ্ট্রের থানে শহর থেকে এমন তিন বাংলাদেশি না’রীকে উ’দ্ধার করেছে সেখানকার পু’লিশ।
একই দিন ব্রিটেনের বিখ্যাত টেলিভিশন চ্যানেল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তাদের একটি প্রতিবেদনে দুই বাংলাদেশি মে’য়ের পা’চার হওয়ার যন্ত্রণার গল্প তুলে ধ’রেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনে দিনে বাংলাদেশ এবং ভারত এই অ’বৈধ বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে।
যাদের গল্প তুলে ধ’রা হয়েছে তাদের একজনের বাড়ি খুলনায়। আরেকজনের নারায়ণগঞ্জে। প্রতিবেদনে খুলনার মে’য়েকে সায়েদা হিসেবে পরিচয় ক’রানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মে’য়েকে বলা হয়েছে ‘অঞ্জলি’ ।
জিওগ্রাফিক লিখেছে, ‘অ’পরিচ্ছন্ন পাড়ায় দুই কামরার বাড়িতে বেড়ে ওঠা সায়েদা, তার শৈশবের বেশির ভাগ সময়টা একাই কা’টিয়েছে। অনেক সকালে তার মা বেরিয়ে যেতেন। তিনি খুলনার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র নিউ মার্কেটে দোকান সাফাইয়ের কাজ করতেন।
সায়েদার বাবা রিকশা চালাতেন। সামান্য পয়সার বিনিময়ে সওয়ারি পৌঁছানো ছিল তার কাজ।’ ‘পড়াশোনায় তেমন সুবিধা করতে না-পারা সায়েদা ১৩-তে পৌঁছানোর আগেই স্কুল ছেড়ে দেয়। বকুনি দিয়ে মা বলেছিলেন, এর ফলে মুশকিলে পড়বে সে।’
‘মিশুক, খোলামেলা স্বভাবের, হাসিখুশি সায়েদা যে কারও সঙ্গে চটপট বন্ধুত্ব পাতাতে পারত। সে সবচেয়ে ভালোবাসত নাচতে। বাবা-মা যখন বেরিয়ে যেতেন, তখন টেলিভিশনে হিন্দি আর বাংলা সিনেমার নাচের দৃশ্যগুলো দেখে দেখে ন’কল করত সায়েদা। মায়ের কাছে ধ’রা পড়ে গেলে বকুনি খেতে হতো।’
প্রতিবেদনটির লেখক যুধিজিৎ ভট্টাচার্যকে সায়েদার মা জানিয়েছেন, তার মে’য়ে যে নাচ-গান করত, প্রতিবেশীরা তা ভাল চোখে দেখতেন না। তার কথায়, ‘আশপাশের লোকজন ওকে খা’রাপ বলতো।’
‘সুন্দরী সায়েদা ছিল পাথরে কোঁদা মসৃণ মুখ আর টানা বড় চোখের একটি মে’য়ে। সে সাজতে ভালোবাসত। এক সময় সে বিউটি সেলুনে হেয়ারস্টাইল, ত্বক-পরিচর্যা আর প্রসাধনী ব্যবহারের শিক্ষানবিশ শুরু করল। তাদের মে’য়ে এলাকার ছেলেদের আক’র্ষণের কারণ হয়ে উঠছে দেখে উ’দ্বিগ্ন বাবা-মা ১৩ বছরেই তার বিয়ে দিয়ে দিলেন। ’
‘বেআ’ইনি হলেও বাল্যবিবাহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু জায়গাতেই সাধারণ ঘ’টনা। কিন্তু বাবা-মা যে ছেলেকে পছন্দ করেছিলেন, সে সায়েদার উপর অ’ত্যাচার করত। এক সময় বা’ধ্য হয়েই বাপের বাড়ি ফিরে এল সায়েদা।’
‘বাড়িতে ফিরে আসার পর নাচের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য মায়ের কাছে আবদার করল সায়েদা। সে তার মাকে বোঝানোর চে’ষ্টা করেছিল, ‘আমি নাচের অনুষ্ঠান করে বাড়ির জন্য কিছু রোজগার করতে পারব।’
‘শে’ষ পর্যন্ত রাজি হন মা, এরপর সায়েদা বিয়েবাড়ি-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচতে শুরু করল। এই সময়েই সে প্রেমে পড়ে। ছেলেটি তার নাচের স্কুলে মাঝে মাঝেই আসত। একসময় সে সায়েদাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। স্বপ্ন দেখায়, সেখানে গেলে সায়েদা আরও অনেক বেশি রোজগার করতে পারবে।
সায়েদার সামনে এক সম্ভাবনাপূর্ণ ভবিষ্যতের ছবি ভেসে ওঠে। ছেলেটির সঙ্গে পা’লানোর ব্যাপারে সে মনস্থির করে ফেলে।’ আর নারায়ণগঞ্জের মে’য়ে অঞ্জলি বাড়ি ছেড়ে ছিল চাকরির লোভে। তার পরিবারের পরিচিত এক জন তাকে ঢাকায় চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি অঞ্জলিকে তুলে দেন অন্য এক জনের হাতে। তার মাধ্যমে অঞ্জলি পা’চার হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গে।
সেখান থেকে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় মুম্বাইয়ের একটি যৌ’নপল্লিতে। সেখানে দু’বছর থাকার পরে পু’লিশ অঞ্জলিকে উ’দ্ধার করে। তাকে পাঠানো হয় একটি আশ্রয় শিবিরে। মাস ছয়েক বাদে অঞ্জলি -এর সঙ্গে এক মহিলার দেখা হয়। তিনি অঞ্জলিকে প্রতিশ্রুতি দেন, বাংলাদেশে পৌঁছে দেবেন।
কিন্তু এ বারও প্রতিশ্রুতিভঙ্গ। ওই মহিলা অঞ্জলিকে বিক্রি করে দেন পশ্চিমবঙ্গের নামখানার একটি গণিকালয়ে। পরবর্তী সময় তাকে সেখান থেকে উ’দ্ধার করা হয়। উ’দ্ধার হওয়ার পরে অঞ্জলি কিছু দিন ‘স্নেহ’ নামক একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল। এখন সে প্রাপ্তবয়স্কা।
নিজেদের কাহিনি বলা সায়েদা এবং অঞ্জলিসহ এ রকম অগণিত দুর্ভাগ্যপীড়িত মে’য়েদের মধ্যে মাত্র দু’জন। অপরাধ জগতের বেশিরভাগ অ’বৈধ ব্যবসার মতো এ ক্ষেত্রেও উৎপীড়নের মাত্রা বোঝা কার্যত অ’সম্ভব। কিন্তু এটা স্পষ্ট, প’তিতাবৃত্তিতে নামানোর জন্য পৃথিবী জুড়ে নাবালিকাদের পা’চার করার যে ব্যবসা, তার পেছনে লেনদেন হয় কয়েকশো কোটি ডলার।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের করা একটি বহুল ব্যবহৃত সমীক্ষা অনুযায়ী, শুধু ২০১৬ সালেই ১০ লাখের বেশি শি’শু যৌ’ন ব্যবসার শো’ষণের শি’কার। যেহেতু এই ব্যবসায়ে শি’শুদের কাজে লাগানোকে চিহ্নিত করা খুব কঠিন, ওই প্রতিবেদনে মেনে নেওয়া হয়েছে যে, প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও অনেক বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পা’চারের শি’কার হওয়াদের কখনোই চিহ্নিত করা যায় না!