৮ বছর ধ’রে কোমায় থেকেও পদোন্নতি পেল লে. কর্নেল দেওয়ান!

সাড়ে সাত বছর ধরে কোমায় আছেন বাংলাদেশ সে’নাবাহি’নীর লে. কর্নেল দেওয়ান মোহাম্ম’দ তাছাওয়ার রাজা। গত ১২ অক্টোবর ছিল তার চাকরির মেয়াদের শে’ষ দিন। সেই দিনটি এক অ’ভাবনীয় আনন্দের ক্ষণ বয়ে আনে তার পরিবারের জন্য। গর্বিত ক’রে সে’নাবাহি’নীকে। কোমায় থাকা তাছাওয়ারকে কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেয় সে’না ক’র্তৃপক্ষ।
সম্মিলিত সা’মরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ৩১৪ নম্বর কেবিন নন্দকুজায় চিকিৎ’সাধীন লে. কর্নেল তাছাওয়ারকে কর্নেল ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হয় সেদিন। এ ঘ’টনা কোনো দেশের সে’নাবাহি’নীর ইতিহাসে বিরল বলে জানা গেছে। আর সেটি সম্ভব হয়েছে সে’নাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের মহানুভবতায়।
যখন সুস্থ ছিলেন, তখন বা’হিনীতে সুনামের সঙ্গে দায়িত্বপালন ও বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রাখায় তাকে এই সম্মানে ভূষিত ক’রেছে সে’নাবা’হিনী। ২০১৩ সালের ১১ মে হৃদরোগে আ’ক্রান্ত হন মরমী শিল্পী হাছন রাজার বং’শধর দেওয়ান তাছওয়ার। এরপর গভীর কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে তিনি আট বছর ধ’রে সিএমএইচে আছেন।
তাকে স্বাভাবিক জী’বন ফিরিয়ে আনতে চে’ষ্টার কমতি নেই চিকিৎ’সকদের। এরই মধ্যে উন্নত চিকিৎ’সার জন্য বাংলাদেশ সে’নাবা’হিনী ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ ক’রে তাকে বিদেশেও পাঠিয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিক জী’বনে ফিরে আসেননি দেওয়ান তাছাওয়ার।
চিকিৎ’সা ভাষায় তার অ’সুস্থতাটা হলো ‘হাইপোস্কিক স্মিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস’। তার হার্টের কার্যকারিতা ফিরে এসেছে, কিন্তু ব্রেইনের পুরোপুরি ফিরে আসেনি। তার ব্রেইনের নিচের অংশ ভালো। প্রিয় মানুষটির চেতনা ফিরে আসার দীর্ঘ ক্লান্তিহী’ন অপেক্ষায় তার স্ত্রী মোসলেহা মুনিরা রাজা, ছেলেমেয়ে ও সহকর্মীরা।
এর মধ্যে এমন পদোন্নতির ঘ’টনা সবার চোখে আনন্দের জল এনে দেয়। কৃ’তজ্ঞতার বাঁধনে আব’দ্ধ ক’রে সবাইকে। ২০১৩ সালের ১২ মে থেকে সিএমএইচের হাসপাতালের বিছানাতে কোমায় আছেন কর্নেল তাছাওয়ার রাজা। এই বিছানাতেই ১২ অক্টোবর সে’না পোশাকে কর্নেল ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃ’ষ্টি হয় সেখানে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপ্লুত তার সহকর্মী ও দেশবাসী। জী’বন-মৃ’ত্যুর সন্ধিক্ষ’ণে থেকে চাকরিজী’বনের শে’ষ দিনে তাছাওয়ার রাজাকে পদোন্নতি দিয়ে এক বিরল স’ম্মানে ভূষিত ক’রেন সে’নাবা’হিনী-প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। আইএসপিআর জানায়, তাছাওয়ারের ৩১ বছর ৩ মাস চাকরিজী’বনের স’মাপ্তি ঘ’টল এই পদোন্নতির মধ্য দিয়ে।
‘কিং অব দ্য ব্যাটেল’ বা সাঁজোয়া কোরের এই চৌকস কর্মক’র্তার ছিল বর্ণাঢ্য কর্মজী’বন। প্রশিক্ষক, অধিনায়ক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন ক’রেছেন তিনি। তার রয়েছে গবেষক ও লেখক হিসেবে খ্যাতি। সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন সদালাপী, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য কর্মক’র্তা। চাকরিজী’বনে দেশ-বিদেশে ‘স্টাফ কোর্স’সহ সম্পন্ন করেছেন বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ।
১৯৮৯ সালে ২০তম লং কোর্সের সঙ্গে সাঁজোয়া কোরে কমিশন লাভ ক’রেন দেওয়ান মোহাম্ম’দ তাছাওয়ার রাজা। তিনটি সাঁজোয়া রেজিমেন্টে বিভিন্ন পদে চাকরিসহ ঘাটাইল সে’নানিবাসে একটি রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তার অধীন ইউনিটটি ২০০৮ সালে ডিভিশনে সেরা ইউনিট হওয়ার গৌরব অর্জন ক’রে।
এ ছাড়া ‘আর্মার্ড স্কুল’ ও ‘পদাতিক স্কুলের’ (এসআইএন্ডটি) রণকৌশল প্রশি’ক্ষক ছিলেন দেওয়ান তাছাওয়ার। প্রশি’ক্ষক হিসেবেও তার ছিল বিশেষ খ্যাতি। কর্নেল তাছাওয়ার রাজা ইরাক, কুয়েতে শান্তির’ক্ষা মিশনে বিশেষ অবদানের জন্য ‘পিস মেডেলে’ ভূষিত হন।
তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান স্টাফ কলেজ সম্পন্ন ক’রেন এবং চায়না-আমেরিকা থেকে সাঁজোয়া যানের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এ ছাড়া তিনি মিরপুর স্টাফ কলেজের একজন গ্র্যাজুয়েট এবং সেখানকার প্রশিক্ষক হন। একজন সাহিত্যমনা সে’না কর্মক’র্তা ছিলেন কর্নেল তাছাওয়ার রাজা।
বাউলশিল্পী হাছন রাজার এই বং’শধর কর্মজী’বনে লিখেছেন একাধিক বই। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ‘হাছন রাজা’, ‘জেনারেল ওসমানি: কর্নেল মাই কর্নেল’, ‘বাংলাদেশ সে’নাবা’হিনী ও ইতিহাস’। এই সে’না কর্মক’র্তার স্ত্রী মুনিরা রাজা বলেন, তাছাওয়ার রাজাকে তার কর্মের যোগ্য প্রতিদান দিয়েছে সে’নাবা’হিনী, যা আমাদের আ’জী’বন কৃতজ্ঞতার বাঁধনে আব’দ্ধ ক’রে রাখবে।
তাছাওয়ার রাজার এই পদোন্নতির সিদ্ধান্ত সে’নাপ্রধানের এক মহানুভবতার পরিচয় বলে মন্তব্য ক’রে মুনিরা রাজা বলেন, ‘এমন ঘ’টনা বাংলাদেশ সে’নাবা’হিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ক’রল। আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি মাননীয় সে’নাপ্রধান আমার স্বামীকে এমন স’ম্মান দেবেন। এ স’ম্মানে আমরা গর্বিত। বিদায়বেলায় প্রত্যাশার চেয়ে এটি অনেক বড় এক অর্জন।’
সিএমএইচের আইসিইউ-প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ মজুমদার জানান, কর্নেল দেওয়ান মোহাম্ম’দ তাছাওয়ার রাজার অ’সুস্থতাকে চিকিৎ’সার ভাষায় বলা হয় ‘হাইপোস্কিক স্মিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস’। ওনার (দেওয়ান মোহাম্ম’দ তাছাওয়ার রাজা) হার্টের কার্যকারিতা ফিরে এসেছে, কিন্তু ব্রেইনের ফিরে আসেনি।
পুরো প্রক্রিয়ার সময় তার ব্রেইনে সার্কুলেশন ৫ মিনিটের অতিরিক্ত ছিল, কিন্তু ১৫ মিনিটের কম ছিল। এ জন্য তার ব্রেইনের নিচের অংশ ভালো। কিন্তু যে অংশগুলো আমাদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জ’ড়িত, সেই এরিয়ার সেলগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়নি। এ জন্য জী’বন চালানোর জন্য বেসিক বডির প্রটেকটিভ সিস্টেম ভালো থাকলেও হাইয়ার সাইকোলজিক্যাল ফাংশনগুলো ক্ষ’তিগ্রস্ত হয়েছে।