Miscellaneous News

গরুর মাংস ৫৮০ টাকা কেজি, হৈচৈ

বগুড়া শহরের বিভিন্ন বাজারে এক কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। গ্রামের হাটবাজারে তা ৬৮০ টাকা। এমন সময়ে ৫৮০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করে এক কসাই হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী মোড়ে নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই বিগত এক বছর ধরে বাজারের চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করছেন। বিষয়টি লোকমুখে এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এখন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিড় থাকছে তাঁর দোকানে।

বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে শিমুলতলী মোড়। বাগবাড়ী সড়কের এই মোড় এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে কালু কসাইয়ের ‘গোশত ঘর’ হিসেবে। শহর থেকে ৩০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় ছুটছেন ক্রেতারা। যাতায়াতে ৬০ টাকা খরচ হলেও বাজারের চেয়ে সাশ্রয় হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে শিমুলতলী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়দের চেয়ে মাংস কেনার জন্য অন্য এলাকার মানুষের ভিড় বেশি। সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট থেকে এসেছেন মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বালুয়াহাটে প্রতি কেজি মাংস ৬৮০ টাকা। ফেসবুকে দেখেছি, এই মোড়ে মাংস ৫৮০ টাকা কেজি। এক কেজি মাংসে ১০০ টাকা কম। এ কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছি। ১০০ টাকার তেল খরচ হলেও ৩০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য বাদশা মিয়া বলেন, ‘বাইরের এত মানুষ প্রতিদিন মাংস কিনতে আসেন যে এলাকার মানুষ কালুর দোকান থেকে মাংস নিতে পারেন না। দূর-দূরান্তের মানুষ এলাকার অতিথি, এ জন্য তাঁদের আগে মাংস দিয়ে বিদায় করতে হয়। এলাকার যাঁরা মাংস নিতে চান তাঁরা আগে কালুকে বলে যান, পরে এসে মাংস নিয়ে যান।’

ভিড় ঠেলে গিয়ে নজরুল ইসলাম কালুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বড় ছেলে আবু হাসানকে দোকান সামলাতে দিয়ে বেরিয়ে আসেন।

তিনি জানান, প্রায় ২৬ বছর ধরে তিনি এই পেশায় জড়িত। এক বছর আগেও তিনি বাগবাড়ী বাজারে মাংস বিক্রি করতেন। কিন্তু গত বছর সেখানে টোল বাড়ান হয়। এত টাকা কেন দিতে হবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তখনই তিনি হাটে দোকান না করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বাড়ির পাশে শিমুলতলী মোড়ে দোকান বসান।

তিনি জানান, ওই সময় হাটে মাংস বিক্রি হচ্ছিল ৫৫০ টাকা কেজি। তিনি তখন ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু করেন। তখন শহরে দাম ছিল ৬০০ টাকা কেজি। এই কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর দোকানে ক্রেতা বাড়তে থাকেন।

আবু হাসান নামে তাঁর যে ছেলেকে দোকানের দায়িত্ব দিয়ে কথা বলতে উঠে আসেন তিনি এবার স্নাতকে (সম্মান) পড়ছেন। আর ছোট ছেলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কালু জানান, আগে হাটে দোকান দিয়ে দিনে একটা গরুও বিক্রি হতো না। এখন সপ্তাহে অন্তত ২৫টা গরু বিক্রি হচ্ছে। চারজন কর্মচারীর মজুরি বাদ দিয়ে গরুপ্রতি ৫০০ টাকা টিকলেও মাসে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকে। তিনি বলেন, ‘হাটের টোল যেখানে কম, সেসব এলাকার কসাইরা চাইলেই কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারেন। এতে হয়তো লাভ কম হবে, কিন্তু মানুষের উপকার হবে।’

পাঠকের মতামত:

Back to top button