National News

ওসি প্রদীপের ড্রয়ার খুলে অবাক বিশেষ আ’ভিযানিক দল!

ওসি প্রদীপের ড্রয়ার – অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহা’ম্মদ রাশেদ খান হ’ত্যা মা’মলায় গ্রে’প্তার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসের টেকনাফ থা’নার অফিসকক্ষে গত শুক্রবার অ’ভিযান পরিচালনা করেছে আ’ইনশৃঙ্খলা র’ক্ষাকারী বা’হিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ আ’ভিযানিক দল।

এ সময় তার সাবেক কর্মস্থলের অফিসকক্ষের টেবিলের ড্রয়ার থেকে ইয়াবা বড়ি এবং মাসোহারা গ্রহণ ও প্রদানের একটি তালিকা উ’দ্ধার করে। ওই তালিকা জ’ব্দ করা হয়েছে। তালিকাটি এখন যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এছাড়া ওসির প্রদীপের একটি ব্যাক্তিগত ডায়েরী সন্ধান পেয়েছে আ’ইন শৃঙ্খলা র’ক্ষাকারী বা’হিনী। সেই ডাইরীতে প্রদীপের ২ শত কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য প্রমাণ মিলেছে বলে দা’বি করেছে আ’ইশৃঙ্খলা র’ক্ষাকারী বা’হিনী। টেকনাফ থা’নার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপের ডাইরীতে কিছু ব্যাক্তির নামও পাওয়া গেছে, যাদের প্রদীপ বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন।

একটি সূত্রে জানা গেছে ওসি প্রদীপ গত বছরে বিপুল পরিমাণ টাকা দুবাই ও ভারতে পা’চার করেছেন। বিদেশে এই সব টাকা পা’চারের জন্য টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু ব্যবসায়ী ওসি প্রদীপকে সহযোগিতা করার তথ্যও পাওয়া গেছে এতে।

এছাড়াও টেকনাফ থা’নার সামনে দুইটি দোকানদারের মাধ্যমে প্রদীপ টাকা পা’চার করতেন। ওসি প্রদীপ টেকনাফ ছাড়ার পর ঐ দুই দোকান ব’ন্ধকরে গা ঢাকা দিয়েছে দোকান মালিক।

ওসি প্রদিপের ডাইরীতে গত দুই বছরে বিভিন্ন তারিখে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের থেকে নেয়া কোটি কোটি টাকার তথ্যও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তি, প্রশা’সনের কিছু কর্তা ব্যাক্তিকে মাসিক টাকা দেয়ার কথা ঐ ডায়রীতে লেখা আছে।

প্রদীপ তার অপ’কর্ম প্রকাশ নাকরার জন্য হাতে রাখতেন টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু সাংবাদিকও। এইসব সাংবাদিকদের প্রদীপের মাসিক মোটা অংকের টাকাও দিতেন। আর তারা প্রদীপের অ’পকর্ম সাপোর্ট করত, বাহবা দিত।

টেকনাফে ওসি প্রদীপের অর্থায়নে গত কয়েকমাস আগে একটি অনলাইন টেলিভিশন চালু করা হয়। ঐ অনলাইন টেলিভিশনকে প্রদীপ নিজের প্রচারণার কাজে ব্যবহার করতো এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মেজর সিনহা হ’ত্যা মা’মালা ত’দন্তের দায়িত্ব পাওয়া র‍্যাব কক্সবাজারের উপ অধিয়াক মেজর মেহেদি হাসান জানিয়েছেন, মা’মলার ত’দন্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে ত’দন্তের স্বার্থে এখন কিছুই বলা যাচ্ছেনা।

জানাগেছে, যু’দ্ধাপরা’ধের বি’চার বানচালে সহিংস আন্দোলন দমনে চট্টগ্রামে যে কয়েকজন পু’লিশ কর্মক’র্তা আলোচনায় ছিলেন, তাদের একজন প্রদীপ কুমার দাশ পরে কক্সবাজারে গিয়ে জলদস্যু দ’মনেও প্রশংসিত হয়েছিলেন।

এসব প্রশংসা-পদকের পাশাপাশি বিভিন্ন অ’ভিযোগে একাধিকবার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় মা’মলায় পড়েছেন প্রদীপ। তবে প্রতিবারই সে সব থেকে মু’ক্ত হয়ে ‘ভালো জায়গায়’ পদায়ন পেয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর সারোয়াতলীর ছেলে প্রদীপ প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময়ের চাকরি জী’বনে বেশিরভাগ সময় ঘুরে ফিরে চট্টগ্রাম নগর পু’লিশ (সিএমপি) ও কক্সবাজার জে’লা পু’লিশে চাকরি করেছেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ থা’নার শামলাপুর পু’লিশ চেকপোস্টে পু’লিশের গু’লিতে নি’হত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহা’ম্মদ রাশেদ খান। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘ’টনায় সিনহার বড় বোন ৯ পু’লিশ সদস্যকে আ’সামি করে হ’ত্যা মা’মলা করেন।

ওই মা’মলায় গত বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপসহ ৭ পু’লিশ সদস্যের ৭ দিন করে রি’মান্ড মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের আদালত। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। রবিবার তাদের রি’মান্ডে নেবে মা’মলাটির ত’দন্ত সংস্থা র‌্যাব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত ত’দন্তের অংশ হিসেবে প্রদীপের অফিসকক্ষে ত’ল্লাশি চালানো হয়।

সেখানেই পাওয়া যায় ইয়াবা ও মাসোহারার একটি তালিকা। কথিত ক্রসফা’য়ার বাণিজ্যসহ নানাভাবে আয় করা অর্থের একটি অংশ মাসোহারা হিসেবেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিতেন ওসি প্রদীপ। কিছু অ’পরাধী চক্রের কাছ থেকে তিনি নিজেও নিয়মিত মাসোহারা নিতেন।

তালিকাটি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আ’ইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মক’র্তারা। অ’ভিযানে অংশ নেওয়া কর্মক’র্তাদের ধারণা, নি’রপরাধ ব্যক্তিদের মা’দক মা’মলায় ফাঁ’সাতে এসব ইয়াবা ব্যবহার করা হতো। চাহিদানুযায়ী টাকা না মিললেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইয়াবাসহ গ্রে’প্তার দেখানো হতো।

মাসোহারা বন্ধ হওয়ায় প্রদীপের কাণ্ড
মাসোহারা বন্ধে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কক্সবাজারের মহেশখালীর দস্যু ও অ’স্ত্র কারবারিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় বা’ধা দিয়েছিলেন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস। তখন তিনি মহেশখালী থা’নার ওসি ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে তাদের আত্মসমপর্ণ প্রক্রিয়ায় এক প্রকার প্রকাশ্যে বা’ধা দেন প্রদীপ কুমার।

কারণ তিনি এসব অ’পরাধী চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ করতেন। পরে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে সুরাহা হয়। পরে অবশ্য ২০১৮ সালে ওসি প্রদীপ কুমার দাস মহেশখালী থা’না থেকে টেকনাফ থা’নায় বদলি হয়ে আসেন। এ থা’নায় বদলি হয়ে আসা নিয়ে নানা গল্প সে সময় শোনা যায়।

রিমান্ড শুরু : সিনহা হ’ত্যা মা’মলায় রবিবারে ওসি প্রদীপসহ ৭ পু’লিশ সদস্যকে রি’মান্ডে নেবে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, মা’মলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। আ’সামিদের রি’মান্ডে নেওয়ার পর সময় ন’ষ্ট না হয়। দ্রুত শেষ হয় মা’মলার ত’দন্ত কার্যক্রম।

বর্তমানে কক্সবাজার জে’লা কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন প্রদীপ কুমার দাস, সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৭ পু’লিশ সদস্য। এ বিষয়ে র‌্যাবের আ’ইন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কিছু প্রস্তুতি রয়েছে। সেগুলো শেষ করে আশা করছি রবিবার থেকে রি’মান্ড শুরু হবে।’

পাঠকের মতামত:

Back to top button