বোরকা পরা অবস্থায় সাহেদকে নর্দমা থেকে টেনে বের করে র্যাব

বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা মামলার প্রধান পলাতক আসামি ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর বেইলি ব্রিজের পাশে নর্দমার মধ্যে থেকে বোরকা পরা অবস্থায় গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (১৫ জুলাই) ভোর ৫টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকালীন সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী কোমরপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, শাখরা কোমরপুর ব্রিজের পাশে একটি ছোট ড্রেন রয়েছে নর্দমার মতো। সেই ড্রেনের ভেতরে বোরকা পরে শুয়ে ছিলেন প্রতারক সাহেদ। জেলেরা ভেবেছিলেন কোনো পাগল শুয়ে আছে। আমাদের এলাকায় এমন একজন পাগল রয়েছে। সে যেখানে সেখানে শুয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এরপর র্যাবের তিনটি গাড়ি আসে পর পর। চিৎকার করতে থাকে, এই পেয়েছি এই পেয়েছি। আমরা তখন মসজিদে নামাজ পড়ে বের হয়েছি মাত্র। বোরকা পরা অবস্থায় র্যাব তাকে বের করে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। সাহেদের কাছে একটি পিস্তল পেয়েছে র্যাব। এছাড়া একটি নৌকা ভাড়া করেছিলেন সাহেদ। সেই নৌকায় ভারতে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তবে শুনেছি নৌকার মাঝি তাকে পার করেনি।
সাতক্ষীরা র্যাব ক্যাম্পের অ্যাডিশনাল এএসপি মো. বজলুর রশিদ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে আলোচিত প্রতারক সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
বুধবার ভোরে র্যাবের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার রামগতি সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাঁখরা কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদী তীর সীমান্ত থেকে আনুমানিক ৫.০০ থেকে ৫.৩০ এর দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান দিয়ে নদী পেরিয়ে সাহেদ ভারতে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল। সাহেদ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সাতক্ষীরাতে অবস্থান করছিল। আর কিছুক্ষণ দেরি হলে হয়ত তাকে পাওয়া যেত না।
সাতক্ষীরার স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, সাহেদের বাড়ি সাতক্ষীরা হলেও তার পৈত্রিক ভিটা ওপারে ভারতে। তাকে ইছামতি নদীতে নৌকায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরে ফেলে র্যাব। সাহেদ নদী পেরিয়ে পূর্বপুরুষের ঠিকানা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল সাহেদ । সে এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করা হয় সেটি ভোমরা স্থলবন্দরের কাছাকাছি। এই এলাকার ওপারে ভারতের বশিরহাট জেলা। এর আগেও এভাবেই ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন সাহেদ।
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ভারতে পালানোর জন্য সাতক্ষীরাতে অবস্থান করছিল। সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে র্যাবের অভিযান দলের সঙ্গে হেলিকপ্টার যোগে তাকে ঢাকায় আনা হবে।
র্যাব সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ সাহেদকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে পৌঁছোবে। ইতিমধ্যে র্যাবের একটি বিশেষ হেলিকপ্টার সাতক্ষীরায় পৌঁছে গেছে। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমানবন্দর থেকে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদরদফতরে নেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে জিজ্ঞাসবাদ শেষে বুধবারই তাকে উত্তরা পশ্চিম থানায় হস্তান্তর করা হবে।
তবে সব আইনিপ্রক্রিয়া শেষে থানার মাধ্যমে আজই আদালতে প্রেরণ করা হবে কিনা এ বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগ ৬ জুলাই র্যাব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়।
অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।
পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় র্যাব বাদী হয়ে মো. সাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। সেই মামলায় ৯ দিন পলাতক থাকার পর গ্রেফতার হলেন মো. সাহেদ।