Religion News

রাত ১২টার পর সাহরি গ্রহণ, যা রয়েছে হাদিসে

রোজায় সাহরি নিয়ে মানুষের মনে নানান দ্বিধা ও প্রশ্ন তৈরি হয়। যেমন-শেষ রাতের খাবার গ্রহণ বা সাহরির বিধান কী? ইসলামি শরিয়তে শেষ রাতে সাহরি খাওয়া রোজাদারের জন্য ফরজ, ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক কিনা? কিংবা রোজার বিশুদ্ধতাদর জন্য এ সাহরি গ্রহণ কি পূর্বশর্ত? সাহরি কোন সময়ে খাওয়া উত্তম?

এর মধ্যে অন্যতম হলো সাহরি কখন খাবে? অনেকেই ১২টার পর সাহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে চান। এ ক্ষেত্রে এটি কতটা শরিয়ত মতে গ্রহণযোগ্য?

রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতের খাবারকে আরবিতে সাহুর বা সুহুর বলা হয়। আরবিতে আস-সাহুর শব্দের অর্থ হলো রাতের শেষ সময়ের খাবার। সে আলোকে শেষ রাতের খাবারকে সাহুর, সুহুর বা সাহরি বলা যায়। অর্থাৎ সাহরি মানেই শেষ রাতের খাবার।

রোজা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষ সময় সাহরি বা খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত। কেউ যদি রোজা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষ সময় সুবহে সাদিকের আগে খাবার গ্রহণ করে তবে ওই ব্যক্তি সুন্নাত আদায় করার সাওয়াব পাবেন।

সাহরি গ্রহণের ইসলামি বিধান ও সুন্নাতের নির্দেশনা হলো-
রোজার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের আগে খাবার খাওয়া সুন্নাত। হাদিসের একাধিক ঘোষণায় তাতে রয়েছে অনেক কল্যাণ ও বরকত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-

– ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (মুসলিম)

– ‘সাহরি খাওয়া বরকতময় কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি করো। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ইবনে হিব্বান)

– ‘আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না)।’ (মুসলিম, নাসাঈ)

সাহরি খাওয়ার সময়
ভোর রাতের শেষ মুহূর্তে সাহরি খাওয়া উত্তম। তা পেট ভরে খেতে হবে এমন নয় বরং অল্প হলেও তা অনেক বরকত ও কল্যাণের। কারো যদি পেট ভরা থাকে তাহলে তার অন্তত এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরি গ্রহণ করা উচিত। হাদিসে এসেছে-

– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যায়েদ বিন সাবেত তাকে জানিয়েছেন যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাহরি খেয়ে (ফজরের) নামাজ পড়তে ওঠে গেছেন।

– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সাহরি খাওয়া ও ফজরের আজান হওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কতটুকু? উত্তরে যায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ’৫০ অথবা ৬০ আয়াত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি

উল্লেখ্য, সাহরি খাওয়ার সময় শুরু হয় মধ্যরাত থেকে। আর শেষ হয় ফজরের আগে। তবে ফজরের আগে তথা শেষ রাতে সাহরি গ্রহণ করাই সর্বোত্তম। যদি কেউ মধ্যরাতের আগে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে; তবে তাকে সাহরি গ্রহণের জন্য শেষ রাতে উঠতে হবে। আর মধ্য রাতের পর খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সাহরি খাওয়ার বরকত ও হুকুম আদায় হয়ে যাবে।

তবে কেউ যদি রোজা রাখার উদ্দেশ্য ছাড়া এমনিতেই স্বাভাবিকভাবে রাতের শেষ সময় খাবার খান তবে তা খাওয়া জায়েজ কিন্তু তিনি সুন্নাতের সাওয়াব পাবে না। যেহেতু এ সময় রোজার উদ্দেশ্য ছাড়া স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতের শেষ সময়ে সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে হাদিসে ঘোষিত বরকত, কল্যাণ ও সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন।

পাঠকের মতামত:

Back to top button