Miscellaneous News

পুলিশের নির্দেশে কাটা হলো কিশোরের রংবেরঙের চুল

বরিশালে পুলিশের নির্দেশে এক কিশোরের রংবেরঙের চুল সেলুনে নিয়ে কেটে দেয়ায় সমালোচনা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর আমতলার মোড় লেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, ওই কিশোরের চুল, পোশাক ও আচরণ ছিল উশৃঙ্খল ও উগ্র। তাই তাকে চুল কাটার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি। যদিও একদিন পরে রবিবার ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন তিনি। তবে এর আগেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, এক কিশোরের কাছে বড় চুল রাখা, রং করা ও কানে দুল পরার কারণ জানতে চান এসআই মহিউদ্দিন মাহি। তাকে চুল কাটার নির্দেশ দেন তিনি। বিষয়টিকে সমর্থনও করেন উপস্থিত সাধারণ মানুষ।

এ প্রসঙ্গে ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি জানান, সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বেড়ে চলেছে। বরিশালে যাতে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এজন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। গেল শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনিসহ ডিবির একটি টিম আমতলার মোড় লেকের পাড়ে অবস্থান করছিলেন। এসময় ১০/১৫ জনের একটি কিশোর গ্যাং জন্মদিন পালনের নামে লেক এলাকায় উশৃঙ্খল আচরণ করছিল। তাকের কারণে লেকের পাড়ে হাটতে ও পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা নারী-পুরুষ বিরক্ত হচ্ছিলেন।

কিশোরদের মধ্যে কয়েকজনের মাথার চুল ও পোশাক ছিল উগ্র ধরণের। বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে একজনের মাথার চুল রং করা ও কানে দুল পরা ও শরীরে উল্কা ছিল। তাকে লেকের পাশের একটি সেলুনে নিয়ে গেলে, সে নিজে থেকেই চুল কাটতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষও চুল কাটার পক্ষে ছিলেন বলে দাবি করেন এসআই মহিউদ্দিন মাহি।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে পুলিশের নির্দেশে চুল কাটতে বাধ্য হওয়া কিশোরের পরিচয়। ওই কিশোরের নাম অভি। সে নগরীর বটতলা এলাকার বাসিন্দা, অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।

এদিকে রোববার প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অভি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বন্ধু শ্রী চৈতন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র খায়রুল হোসেন। তবে অভির দাবি তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।

ওই দিনের ঘটনার প্রসঙ্গে অভি মোবাইল ফোনে জানান, তিনি শর্টফিল্মে অভিনয় করেন। তাই চুলে রং করেছেন, কানেও দুল পরতেন। শুক্রবার বিকেলে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় সুটিং ছিলো। সুটিং শেষে এক বন্ধু জন্মদিন পালন করতে আমতলার মোড় লেকের পাড়ে গিয়েছিলেন। কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ তার চুল কাটতে বাধ্য করে।

বিষয়টিকে বে-আইনী কর্মকাণ্ড বলছেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি আফজালুল করিম। তিনি বলেন, পুলিশ কাউকে চুল কাটতে বাধ্য করতে পারে না। আইন পুলিশকে এই ক্ষমতা দেয়নি। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হতে পারে।

একই কথা বলছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন’র বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি বলেন, এঘটনায় ওই কিশোরের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পুলিশ ওই কিশোরকে বুঝিয়ে বলতে পারতো। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা পুলিশের কাজ। তবে কারো বিচার করার ক্ষমতা আইনগতভাবে পুলিশের নেই।

এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি) মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ কারো চুল কাটেনি। ওই কিশোর উশৃঙ্খল টাইপের ছিলো। তাকে দেখতে খারাপ দেখাচ্ছিল। এজন্য হয় তো তাকে সেলুনে নিয়ে গিয়ে চুল কাটতে বলেছে। এই কাজগুলো বাড়িতে বাবা-মায়ের করার কথা’।

পাঠকের মতামত:

Back to top button